হাতিয়ার যখন বাহ্যিক কাঠামোগত সৌন্দর্য

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭ সময়ঃ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছি জ্ঞানবিজ্ঞানে পারদর্শী হতে; যেভাবে একটি ছেলেকে হতে দেখেছি। জ্ঞানের জগতে জানি না, পারি না একথা শুনতে কখনও ভালো লাগেনি; এখনও লাগে না। আমি একজন ছেলেকেই সবসময় আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছি; মেয়েদেরতো কখনোই নয়।

বাহ্যিক কাঠামোগত সৌন্দর্যকে আমি কখনও যোগ্যতা মনে করিনি। তাই এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ শূন্যের কোঠায়। তবে অনেক নারীর উপার্জনের প্রধান উৎস এই সৌন্দর্য। অনেক বিজ্ঞাপন নির্মাতারা আবার নারীর এ সৌন্দর্যকে শক্তি বানিয়ে নিজেদের ব্যবসা সফল করার ভালোই পায়তারা করে বেড়াচ্ছেন। মুষ্টিমেয় বেচারী নারীকে ভালোই ঘোল খাওয়াচ্ছেন এই পুরুষবুদ্ধি।

সৌন্দর্যের মাঝে যদি সম্মান লুকিয়ে থাকতো তাহলে পুরো পৃথিবীর অবস্থাটা হতো বেশ অন্যরকম। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা না হয়ে সৌন্দর্যবৃত্তির চর্চা হতো। একবার কল্পনার চোখে ভাবুনতো কী সাংঘাতিক ব্যাপার। শোপিস আমরা সাজিয়ে রাখি শুধু দেখার জন্য; জ্ঞানগর্ভ আলোচনার সাথে যার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

বাহ্যিক লাল-নীল-হলুদ-সবুজের বাহারে বাহারী সৌন্দর্য সম্পর্কিত কোনোকিছুই আমাকে কখনও আকর্ষণ করে না। যাকে আমি এক কথায় সময় নষ্ট মনে করি। আমার চারপাশের সেই পাঁচমিশালী রঙের আদিখ্যেতা দেখে বড় আফসোস হয়। একবাক্য লেখার যার ক্ষমতা নেই কিংবা ইচ্ছে নেই তাকে দেখি হরহামেশা তাবেদারি করতে।

সৌন্দর্য কী করে আত্মবিশ্বাস জাগাতে পারে ঠিক বোধগম্য নয়। জ্ঞানহীন সৌন্দর্য, ভাবনাহীন জীবন, সৃজনশীল মন ও মননের অভাব নিয়েও একগাদা অতি আত্মবিশ্বাসীর দল চর্তুপাশে ঘুর্ণায়মান দন্ডের মতো শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে লাগামহীনভাবে মগজবিহীন প্রতিবন্ধকতার মতো।

গাড়ীর বিজ্ঞাপনে যখন হাস্যজ্জ্বোল নারীটিকে সটাং দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি; তখন বড় লজ্জা হয়। মন বলে- নারী কখন তুমি জাগবে, জ্ঞানে-বুদ্ধিতে-মানে-সম্মানে? তুমি কী বুঝবে না, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমাকে সুন্দর দেখায় না; নির্বোধ মনে হয়?

যে অস্থায়ী কাঠামোর বড়াই করছো তার ভেতরে বিভৎস-বিদঘুটে আর ভয় জাগানিয়া ভয়ঙ্কর এক কঙ্কালের বাস। এই নিরেট

সত্য যখন নিষ্ঠুভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে; তখন সুচিত্রা সেনের মতো রূপবতীকেও লুকিয়ে থাকতে হয়। অন্ধকারের আস্তাকুড়ে প্রহর গুণতে হয় মহাকাশের; কখন আসবে সেই ক্ষণ জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হবার। হায়, একসময়ের অতি আত্মবিশ্বাসী-শক্তিরূপিনী সৌন্দর্যকে হারিয়ে আজ তিনি দিশেহারা। কোথায় সেই প্রেরণাদাতাগণ; যাদের ইশারায় পুতুলনাচের খেলায় মেতে উঠতো এই সুন্দরী রমনী। আজ এত ভয়-লাজ কেন জনসম্মুখে আসার?

সৌন্দর্য কোনো শক্তি নয়, সৌন্দর্য কোনো আত্মবিশ্বাস নয়; এই সত্য একজন নারী যত দ্রুত বুঝতে পারবে পৃথিবীতে বিচক্ষণ-জ্ঞানী নারীর সংখ্যা তত বাড়বে। আজ যে শারীরিক অবকাঠামোকে চড়া দামে বিক্রি করে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে যে বাবু; কাল সেই আবার মূল্যহীন ব্যবহার্য বস্তুর মতো তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সময় নিচ্ছে না এক মুহূর্তও। তুমি কি বুঝতে পারছো তোমাকে ব্যবহারের বস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য? টিস্যু পেপারের মতো তোমার কদর; যেখানে একবিন্দু সম্মান নেই। তোমার ক্ষেত্রে ইথিক্স চলে না; চলে হলুদ সাংবাদিকতা। তবুও তোমার এত গর্ব? তুমি কি কখনও বুঝবে না শরীর বিক্রি কোনো উচ্চস্তরের কাজ নয়। যে চোখে তা দেখা হয় তাও ভদ্রতাপ্রসূত নয়; আদিমতার। যে মনে তা গ্রহণ করা হয় তাও ভালবাসার নয়; সাময়িক বদইচ্ছার।

শারমিন আকতার
লেখক: সাংবাদিক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G